রং তুলিতে এন্ড্রু কিশোরকে তরুণের শ্রদ্ধা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেয়ালিকায় শোভা পাচ্ছে কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোরের ছবি। তার সামনে তুলি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন এক তরুণ। এমন একটি ছবি কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। শিল্পীর আঁকা ছবিটি নেটিজেনদের ঢের প্রশংসা কুড়াচ্ছে।

দেয়ালে আঁকা ছবির এক কোণে দেখা যায় এই ছবির কারিগরের নাম আর করিম। ব্যাস এতটুকুই। একদিন ব্যয় করার পর খোঁজ মিললো চিত্রশিল্পী আর করিমের। থাকেন চট্টগ্রামের কক্সবাজারে। স্থানীয় একটি কলেজে এইচএসসি’র দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। আর নিজের বাড়ির ঘরের দেয়ালে প্রিয় শিল্পীর ছবিটি এঁকেছেন তিনি।

রাইজিংবিডির সঙ্গে দীর্ঘ আলাপচারিতায় প্রিয় শিল্পীকে তার আবেগ, ভালোবাসার কথা জানিয়েছেন আর করিম। তিনি বলেন—এন্ড্রু কিশোর স্যারকে আমি অসম্ভব রকমের ভালোবাসি। যা ভাষায় প্রকাশ করা দুষ্কর। স্যার মারা যাওয়ার আগেও তাঁর ছবি এঁকেছি, মারা যাওয়ার পর এই ছবি আঁকি। কয়েক দিন আগে ফেসবুকে পোস্ট করার পর তা ছড়িয়ে পড়ে। অনেকের কাছে কাজটি ভালো লেগেছে। অনেকের প্রশংসা পাচ্ছি। এটা আমার জন্য পরম পাওয়া। এই মহান শিল্পীর প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা ভালোবাসা থেকে ছবিটি এঁকেছি।

আর করিমের রং তুলিতে এন্ড্রু কিশোর

সম্প্রতি এন্ড্রু কিশোরের মৃত্যুসংবাদে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েন আর করিম। তার ভাষায়—স্যারের মৃত্যুর খবর শুনে আমি শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ মনে হলো স্যারের একটি বড় করে ছবি আঁকবো এবং ভিডিও করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করবো। ছবি আঁকার জন্য বেছে নিই বাড়ির দেয়ালিকা। ছবিটি এঁকে ভিডিওটি পোস্ট করলে তুলনামূলকভাবে লাইক কমেন্ট এবং শেয়ার হতে থাকে। ভিডিওটি অনেক গুণীজনের নজরে পড়ে। অনেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগও করছেন। ভিডিওটি এক প্রকার ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। দেয়ালিকায় যে ছবি এঁকেছি, এ ছবির রঙের পরতে পরতে মিশে আছে এন্ড্রু কিশোর স্যারকে নিয়ে আমার সব আবেগ। আমি এন্ড্রু কিশোর স্যারের ছবি আঁকিনি, এন্ড্রু কিশোরকে এঁকেছি।

ছোটবেলায় এন্ড্রু কিশোরের গাওয়া ‘দুনিয়া দুইদিনের মেলা, এসেছি একলা যাবো একলা’ গানটি প্রথম শুনেন আর করিম। তখন গানটির শিল্পী কে তা জানার মতো বয়সও হয়নি। তার বাড়িতে গান শুনার মতো পরিবেশ ছিলো না, গানের মানুষও ছিলো না। বলতে গেলে শুধু পরিবার নয়, তার বংশে শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত কেউ নেই। প্রধান সড়কের পাশেই আর করিমের বাড়ি। রাস্তার পাশের দোকানে গান বাজালে তা শুনতে পেতেন। এন্ড্রু কিশোরের গাওয়া গানগুলো তাকে খুব আকর্ষণ করতো। খুব টানতো। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াকালীন পাশের দোকানে নাস্তা নিতে গিয়ে এন্ড্রু কিশোরকে প্রথম দেখেন ভিসিডির কাভারে। তার আগের শুনা গানগুলো যে এই শিল্পীর ছিলো তাও বুঝতে পারেন। এরপর একটু একটু করে এন্ড্রু কিশোর সম্পর্কে অনেক কিছু রপ্ত করেন। আর এভাবেই তার একজন ক্ষুদ্র ভক্ত হয়ে ওঠেন বলে জানান আর করিম।

বাড়ির দেয়ালিকায় শোভা পাচ্ছে আর করিমের আঁকা ছবি

আর করিমের আঁকা এন্ড্রু কিশোরের ছবিটি নজরে এসেছে এন্ড্রু কিশোরের পরিবারের সদস্যদের। প্রয়াত এ শিল্পীর পরিবারের পক্ষ থেকে আর করিমের সঙ্গে কথা বলেছেন এন্ড্রু কিশোরের শিষ্য মোমিন বিশ্বাস। আর করিমের আঁকা ছবিটি এন্ড্রু কিশোরের বাড়িতে শোভা পাবে বলে আর করিমকে জানানো হয়েছে।

এন্ড্রু কিশোরের আঁকা ছবি নিয়ে বিশেষ একটি পরিকল্পনার কথাও জানালেন আর করিম। তিনি বলেন—এ পর্যন্ত এন্ড্রু কিশোর স্যারের শিল্পসমৃদ্ধভাবে দুটি ছবি এঁকেছি। প্রথম ছবিটি স্যারের অসুস্থতার খবর শুনে এঁকেছিলাম। দ্বিতীয় ছবিটি মৃত্যুর খবর শুনে আঁকা। সম্প্রতি আমি পরিকল্পনা করেছি এন্ড্রু কিশোর স্যারের শতাধিক ছবি এঁকে একটি চিত্রপ্রদর্শনী করবো।

আর করিমের বাড়ির দেয়ালিকায় আরো বেশ কজন গুণী শিল্পীর ছবি রয়েছে। এ তালিকায় রয়েছেন—কাজী নজরুল ইসলাম, হুমায়ূন আহমেদ, কুদ্দুস বয়াতি, মনির খান, প্রমুখ।

মহেশখালির পুটিবিলা গ্রামে জন্ম ও বেড়ে ওঠা আর করিমের। পারিবারিক নাম রেজাউল করিম হলেও আর করিম নামেই অধিক পরিচিত তিনি। আর করিম ছবি আঁকার শিক্ষা কারো কাছ থেকে গ্রহণ করেননি। নিজ ইচ্ছায় এতটুকু শিখেছেন। তার ধ্যান জ্ঞানে মিশে আছে এই চিত্রশিল্প। ভবিষ্যতে চারুকলায় পড়তে চান এই শিল্পী।

ঝরাপাতায় আর করিমের শিল্প

আর করিমেরে ভাষায়—আমি ছোটবেলা থেকে ছবি আঁকি। ছোটবেলায় কম আর বেশি সবাই ছবি আঁকতে ভালোবাসে। তেমনি আমিও আঁকতাম। কিন্তু আমি সেই ভালোবাসা ছাড়তে পারিনি। এখন আমার মনে হয় ছবি আঁকা ছাড়া আমাকে দিয়ে আর কোনো কাজ হবে না। আসলে না এঁকে থাকতে পারি না বলে আঁকি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর